ইতিহাস– নবম শ্রেণি – ফরাসী বিপ্লব (তৃতীয় পর্ব)|
আগের দুটি পর্বে আমরা ফরাসী বিপ্লবের প্রারম্ভিক পর্ব (প্রথম পর্ব) এবং আর্থিক সংস্কার ও বাস্তিল দুর্গের পতন (দ্বিতীয় পর্ব) নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা জাতীয় সংবিধান সভা ও রাজার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আলোচনা করবো।
জাতীয় সংবিধান সভা
টেনিস কোর্টের শপথের দাবী রাজা মেনে নেওয়ার ফলে, জাতীয় সভা, সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়। 1789 সাল থেকে এই সংবিধান রচনার কাজ শুরু হলেও তা লিখিতরূপ পেতে দুই বছর (1791) সময় লাগে।
কিন্তু মূল সংবিধান রচনা হবার আগে, বাস্তিল দুর্গের পতনের ঠিক পরেই অর্থাৎ আগস্ট মাসে ‘আগস্ট সংবিধান সভা’ দুটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
প্রথমত, সামন্তপ্রথা ও তার সমস্ত স্বত্ব বিলোপ করা হয়।
দ্বিতীয়ত, ‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকারপত্র’ ঘোষণা করা হয়। এই অধিকারপত্রটি হল মানব সভ্যতার সার্বভোমত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
মানুষ ও নাগরিকের অধিকারপত্র
এই ঘোষণাপত্রের সাহায্যে, মানুষের ক) ব্যাক্তি স্বাধীনতা খ) বাক্ স্বাধীনতা গ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ঘ) সমানাধিকার ও ভোটাধিকার ঙ) সভা – সমিতির অধিকার স্বীকৃত করা হয়।
শুধু তাই নয়, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে, ঠুনকো বিচার ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ পদ ক্রয় বিক্রয় করা ইত্যাদির সমাপ্তি ঘটে।
পরবর্তী সময়ে, 745 জন সদস্য নিয়ে একটি আইনসভা গঠন করা হয়। এই আইনসভার হাতে অর্থব্যবস্থার সংস্কার – রুপায়ন, বিদেশনীতি ও দেশীয় আইন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের দায়িত্ব (সকলের জন্য এক আইন) দেওয়া হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই সভা ছিল সার্বভৌম, এখানে রাজার কোনরূপ বিশেষ অধিকার ছিল না।
রাজার মৃত্যুদণ্ড
সংবিধান গঠনের ফলে ফান্সে দৈব রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়।
সেই সময়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রজাতন্ত্রের কোন উদাহরণ ছিল না, তাই নানান পরীক্ষামূলক পরিকল্পনার সাথে এই নব্য ‘প্রজাতন্ত্র’ ভাবনার অগ্রগতি চলছিল। এই নতুন ব্যবস্থা ছিল নড়বড়ে। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্রপন্থী বিপ্লবীদের মধ্যে কিছু মানুষ মনে করতেন এই নতুন গণতন্ত্রে রাজার প্রয়োজনীয়তা আছে আবার কিছুজন মনে করতেন রাজার কোন প্রয়োজন নেই।
তাই রাজা বিপ্লবীদের একটি গোষ্ঠীর সাথে বিশেষ ভাবে যোগাযোগ রেখে তাঁর শাসনব্যবস্থা ফিরে পাবার প্রয়াস করছিলেন। কিন্তু রাজতন্ত্রপন্থি বিপ্লবী নেতা মিরবোর মৃত্যুর ফলে রাজা বিশেষভাবে ভীত হয়ে পড়েন এবং 1791 সালের 20শে জুন তিনি স্বপরিবারে গোপনে ফ্রান্স ত্যাগের প্রয়াস করেন। রাজার স্ত্রী, রাণী মারি আঁতোয়ানেত ছিলেন অস্ট্রিয়ার রাজার কন্যা, তাই রাজা ষোড়শ লুই গোপনে অস্ট্রিয়া পালাবার পরিকল্পনা করেন।
দুর্ভাগ্যবশত রাজা সীমান্তে ধরা পড়েন।
এই ঘটনার ফলে সকল বিপ্লবীরাই রাজার অন্তর্ঘাত অনুমান করে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা ভাবতে শুরু করেন যে, গোপনে ফ্রান্সের রাজা, অন্যন্য দেশের রাজার সমর্থন নিয়ে নব্যগঠিত গণতন্ত্র হত্যা করতে চাইছেন। ইতিমধ্যে, প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া থেকে ফ্রান্সের রাজপরিবারের নিরাপত্তার সমর্থনে বার্তা এলে, বিপ্লবীদের সন্দেহ প্রবল হয়ে ওঠে।
1791 সালের, 10ই আগস্ট ‘জ্যাকোবিনদের’ নেতৃত্বে জনতা রাজপ্রাসাদ (Tuileries) আক্রমণ করে ও রাজাকে বন্দী করে। জনতার এই অভ্যুথানকে ‘দ্বিতীয় ফরাসী’ বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়।
সংবিধান রচনার পরে 1792 সালে ফ্রান্সে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, এই ভোটে 25 বছরের বেশি সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণ করেন।
এই ভোটের ফলে যে ‘আইন সভা’ গঠিত হয় তার নাম দেওয়া হয় ‘ন্যাশনাল কনভেনশন’। 1792 সালের 21শে সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম এই সভার অধিবেশন বসে, এই সভার শুরুতেই ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ন্যাশনাল কনভেনশনের অন্যতম শক্তিশালী দল জ্যাকোবিনরা রাজার মৃত্যুদন্ড দাবী করে। নামমাত্র বিচার করে 21শে জানুয়ারি 1793 গিলেটিনের মাধ্যমে রাজার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
শুনুন ফরাসী বিপ্লবের তৃতীয় পর্বের পাঠ।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
জ্যাকোবিন দলের অন্যতম নেতা রোবস্পিয়ারের এই প্রসঙ্গে একটি উক্তি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে – “রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে, রাজাকে মরতে হবে” [“The king must die that the state may live”]
তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত। চতুর্থ পর্ব পড়ুন।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-Hist-1c