বিষয়: ভৌত বিজ্ঞান । শ্রেণী: নবম । অধ্যায়: পরমাণুর গঠন
মৌলরা কি করে জন্মায়?
আমাদের পুরোনো একটি লেখায় আমরা দেখিয়েছিলাম যে পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন সভ্যতায় আমাদের গঠন উপাদানের ব্যাপারে কৌতূহল বর্তমান এবং তারা নিজেদের মতো করে সেই উপাদানের প্রকৃতি ব্যাখ্যাও করেছিলেন। আজ আমরা দেখবো, বৈজ্ঞানিক উপায়ে কিভাবে আজকে আমাদের জানা উপাদান গুলি আবিষ্কৃত হলো।
আমরা পূর্ববর্তী প্রবন্ধে দেখেছি, গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ও ভারতীয় দার্শনিক কণাদ কিভাবে মৌলের প্রাথমিক ধারণা দেন। কিন্তু সেই চরিত্রের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়ে পরমাণুর জনক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন জন ডালটন। 1779 নাগাদ ল্যাভয়সিয়ার বায়ুকে বিচ্ছিন্ন করে দেখান যে বায়ু কোনো মৌল নয়, দুটি বা ততোধিক মৌল ও যৌগের মিশ্রণ। সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক মহলে খোঁজ শুরু হয় নতুন মৌলের আর পুরোনো জ্ঞাতব্য পদার্থের মধ্যে মৌল সন্ধানও শুরু হয়, কিন্তু কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে কোনো পদার্থকে মৌলের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা জানা ছিল না। ডালটন তার পরমাণুবাদ তত্ত্বের সাহায্যে এর নিরসন করেন।
[আরো পড়ুন – ভৌত বিজ্ঞান । অধ্যায়: বল ও গতি (নিউটনের গতিসূত্র ও বলের সংজ্ঞা)]
ডালটনের পরমাণুবাদের অন্যতম নীতিগুলি হল
১. পরমাণু পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য ও নিরেট কণা
২. এটিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না
৩. একই মৌলের সকল পরমাণু এক
৪. ভিন্ন মৌলের পরমাণু সমস্ত প্রকারে ভিন্ন
৫. পরমাণু নিজেদের মধ্যে সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে
৬. রাসায়নিক বিক্রিয়ার একক পরমাণু
এগুলির মধ্যে পাঁচটি তত্ত্বই পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হলেও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি প্রস্তর এগুলিই স্থাপিত করেছিল।
কোন তত্ত্বটি ঠিক ছিল? জানো কি? জানলে নিচের কমেন্ট বক্স কমেন্ট করে সকলকে জানাও।
ইলেক্ট্রনের আবিষ্কার:
১৮৭৮ সালে উইলিয়াম ক্রুকস আবিষ্কৃত ক্যাথোড রশ্মি (ভর বিশিষ্ট তড়িদ্গ্রস্ত কণা), পরমাণুর অবিভাজ্যতা নিয়ে বিজ্ঞানী থমসনকে ভাবতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন যদি পরমাণু অবিভাজ্য হয় তবে এই ঋণাত্মক তড়িতাহত কণা সৃষ্টি হচ্ছে কোথা থেকে? তিনি পরীক্ষা করে দেখান যে এটির উৎস পরমাণু। তাঁর পর্যবেক্ষণ মেনে পরমাণুর নতুন মডেল সৃষ্টি করা হলো, যা পাম পুডিং মডেল নামে খ্যাত।

এই সময় অন্যদিকে ম্যাডাম কুরী ও হেনরি বেকরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করছিলেন।
তারা দেখালেন যে কিছু কিছু মৌল ও তাদের তৈরী যৌগ থেকে তিনটি রশ্মি নির্গত হয় – আলফা, বিটা ও গামা। এই রশ্মিগুলির মধ্যে আলফা ছিল সবথেকে ভারী ও ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড পরমাণুর ওপর এই কণা দিয়ে আঘাত করে দেখালেন অধিকাংশ কণাই ভেদ করে যাচ্ছে। তিনি বললেন পরমাণু অবিভাজ্যও নয় আবার নিরেটও নয়। ফুটবল মাঠের মাঝখানে রাখা একটি মটর দানার মতো ছোট একটি কেন্দ্রকে রাখা আছে সমস্ত ধনাত্মক আধান ও ভর। আর তার চারদিকে কক্ষপথে ঘুরছে ইলেকট্রন, ঠিক যেন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]
প্রোটনের আবিষ্কার:
গোল্ডস্টেইনের অ্যানোড রশ্মি থেকে জানা গিয়েছিলো যে পরমাণুতে ঋণাত্মক কণার সাথে ধনাত্মক কণাও বর্তমান। কিন্তু প্রতি পরমাণুতে কতগুলি করে কণা আছে সেটি জানা যাচ্ছিলো না। মোসলে তার পরীক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কার করলেন সেই সংখ্যাগুলি, এদের বলা হয় পরমাণু ক্রমাঙ্ক। এই সংখ্যাই প্রোটনের সংখ্যার সাথে সমান হতে দেখা গেলো। বোঝা গেল অ্যানোড রশ্মি প্রোটন কণার স্রোত।
নিউট্রনের আবিষ্কার:
পরমাণুর মোট ওজনকে ভর সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হতো। কিন্তু ভর সংখ্যার সাথে প্রোটন সংখ্যার গরমিল লক্ষিত হচ্ছিলো। রাদারফোর্ডের ছাত্র চ্যাডউইক পোলোনিয়াম (Po) ধাতুর ওপর আলফা কণা দিয়ে আঘাত করে বার করলেন একটি ভারী চার্জবিহীন কণা, যেটি পরমাণুর ভরকে ব্যাখ্যা করে। এই কণাটি হল নিউট্রন।
ক্যালসিয়াম (Ca) পরমাণুতে কতগুলি নিউট্রন আছে জানো কি?
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]
আইসোটোপ, আইসোটোন, আইসোবার ও আইসোইলেক্ট্রনিক পরমাণু:
আইসোটোপ কাকে বলে?
যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু বাকি সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয় তাদেরকে বলা হয় আইসোটোপ। প্রোটন সংখ্যা এক হওয়ার কারণে এদের পরমাণু ক্রমাঙ্ক এবং ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসও এক হয়। তার ফলে এরা একই ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম দেখায়। আদতে এরা একই মৌলের ভিন্ন ভরের পরমাণু। ডালটনের কথা এখানে মিথ্যা প্রমাণিত হলো। আইসোটোপ সম্পর্কে আরো পড়ুন।

আইসোটোন কাকে বলে?
যে সকল পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু বাকি সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয় তাদের আইসোটোন বলে। নিউট্রন সংখ্যা নির্ধারিত হয় ভর সংখ্যা থেকে পরমাণু ক্রমাঙ্ক অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা বাদ দিয়ে। এরা দুটি ভিন্ন মৌল হয়, ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মও ভিন্ন হয়। আইসোটোন সম্পর্কে আরো পড়ুন।
আইসোবার কাকে বলে?
যে সকল পরমাণুর ভর সংখ্যা সমান কিন্তু বাকি সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয় তাদের আইসোবার বলে। নিউট্রন ও প্রোটন সংখ্যা একযোগে ভরসংখ্যা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এরা দুটি আলাদা মৌলের হলেও এদের ভর সমান, বাকি ধর্ম আলাদা। ডালটনের মতবাদ এখানেও ভুল প্রমাণিত হয়। আইসোবার সম্পর্কে আরো পড়ুন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লিইক করার আবেদন রইল
লেখার সময় কোনটা আইসোবার আর কোনটাই বা আইসোটন খুব গুলিয়ে যায়, এটা মনে রাখার একটা সহজ উপায়।
সংখ্যা এক থাকে |
সংখ্যা আলাদা থাকে |
তাকে বলে |
প্রোটন |
নিউট্রন ও ইলেকট্রন |
আইসোটোপ (মনে রাখার জন্য – প্রোটনে ও আইসোটোপ দুটোতেই ‘প’ আছে) |
নিউট্রন |
প্রোটনও ইলেকট্রন |
আইসোটোন (মনে রাখার জন্য – নিউট্রন ও আইসোটোন দুটোতেই ‘ন’ আছে) |
পরমাণুর ভরসংখ্যা |
প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন |
আইসোবার (মনে রাখার জন্য – ভর ও আইসোবার দুটোতেই একই রকম শুনতে শব্দ ‘বার’ আছে) |
আইসোইলেক্ট্রনিক আয়ন
প্রোটন যেহেতু পরমাণুর কেন্দ্রকে থাকে তাই তাদের মুক্ত করা কঠিন, কিন্তু সমসংখ্যক ভ্রাম্যমান মুক্ত ইলেক্ট্রনের উপস্থিতিতে কোনো পরমাণু নিস্তড়িৎ অবস্থা লাভ করে অস্তিত্ব লাভ করে। এই অবস্থায় এরা স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে পারে, কিন্তু স্থিতিশীল হতে পারে না (নিষ্ক্রিয় গ্যাস ছাড়া)। তাই পরমাণু ইলেক্ট্রন মুক্ত বা যুক্ত করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভ করলে পরমাণুর ধ্রুবীয় দ্রবণে স্থায়িত্ব লাভ হয়। এই সময় যেসব আয়নের ইলেক্ট্রন সংখ্যা সমান থাকে তাদের আইসোইলেক্ট্রনিক আয়ন বলে।
আরো পড়ুন – মাধ্যমিক পরীক্ষায় কিভাবে নম্বর বাড়ানো যায়?
দেখতো নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর কিনা।
- পাম পুডিং মডেল কাকে বলে?
- হিলিয়াম ও আর্গনের ইলেক্ট্রন বিন্যাস কি?
- আইসোটোপ কাকে বলে? দুটি আইসোটোপের উদাহরণ দাও।
- আইসোটোন কাকে বলে? দুটি আইসোটোনের উদাহরণ দাও।
- আইসোবার কাকে বলে? দুটি আইসোবারের উদাহরণ দাও।
- চারটি আইসোইলেক্ট্রনের উদাহরণ দাও ।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা