bivokti
Study (পড়াশোনা)

বিভক্তি – সহজে ব্যাকরণ

সহজে ব্যাকরণ সিরিজ (দশম পর্ব) – বিভক্তি


আজকের ক্লাসে খুব ছোট্ট একটি বিষয় আলোচনা করবো বন্ধুরা। আশা করছি তোমরা উপভোগ করবে এবং সহজেই বুঝতে পারবে বিভক্তি বিষয়টি ঠিক কী? দেখো বন্ধুরা, আমরা যখন কিছু লিখি এক বা একাধিক বাক্য তৈরি হয় আর সেইসব বাক্যগুলির মধ্যে যে সব শব্দ বসাই সেগুলিকে আমরা কি আর শব্দ বলি? নাকি পদ বলি?
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, শব্দ তখন পদে বদলে যায়।


আরো পড়ো→ সর্বনাম | বিশেষণ | ক্রিয়া | ধাতু

কীভাবে এই পরিবর্তন হল? মানে কে পাল্টে দেয় শব্দকে? সব কাজের কাজি হল বিভক্তি মহাশয়। ব্যাকরণে পড়েছিলে শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তা পদে পরিণত হয় এবং তখনই তা বাক্যে বসতে পারে।

তাহলে আজকে আমরা জানবো এই বিভক্তির হাঁড়ির খবর!

যদি জিজ্ঞেস করা হয় বিভক্তি কী?

আমরা তখন বলবো বিভক্তি আসলে একটা বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যার নিজস্ব কোনো অর্থ নেই কিন্তু তা শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে বসে তাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।

যেহেতু এর নিজস্ব কোনো অর্থ নেই তাই এই বিভক্তি শব্দ বা ধাতুর সাহায্য ছাড়া একা একা স্বাধীনভাবে বাক্যে বসতে পারে না।
উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা দেখে নেওয়া যাক।

যেমন – গোপাল ঘরে ফিরে এলো।

এই বাক্যে গোপাল, ঘর, ফেরা, এলো এই নামপদ ও ক্রিয়ার সঙ্গেও বিভক্তি যুক্ত হয়েছে আর তার জন্যেই বাক্যে এরা ঠিকভাবে বসে সামগ্রিক অর্থ তৈরি করেছে।

দেখে নিই কীভাবে?
‘গোপাল’ নামপদের সঙ্গে শূন্য বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন করবে তোমরা শূন্য বিভক্তি বিষয়টি কী?

একটু অপেক্ষা করতে হবে বন্ধুরা। এর জন্য এই ক্লাসের শেষ অবধি পড়তে হবে যে। আমি নিশ্চিত তোমাদের সব উত্তর এখানেই পেয়ে যাবে। আবার এই বাক্যে ‘ঘর’ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি আর ‘ফেরা’ ক্রিয়ার অন্তর্গত ‘ফির্‌’ ধাতুর সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।


আরো পড়ো→ ধ্বনির ধারণা | বর্ণ | বাক্য | সন্ধি

গোপাল + শূন্য বিভক্তি = গোপাল
ঘর + এ বিভক্তি = ঘরে
ফির্‌ + এ = ফিরে

এই হল বিভক্তির জাদু। আশা করি বুঝতে পেরেছো। আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

যেমন – মাঠে ছেলেরা খেলছে।

এই বাক্যে ‘মাঠ’ শব্দের সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি, ‘ছেলে’ শব্দের সঙ্গে ‘রা’ বিভক্তি এবং ‘খেল্‌’ ধাতুর সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

এইরকম যে কোনো পদেই বিভক্তি যুক্ত হয়। বাংলায় উৎস বা উৎপত্তি অনুযায়ী বিভক্তি হল দুই প্রকার –
ক) বিভক্তিজাত বিভক্তি
খ) অনুসর্গজাত বিভক্তি

প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় যে এ বিভক্তি এসেছে তাকে বিভক্তিজাত বিভক্তি বলা হয়। আর অনুসর্গজাত বিভক্তি হল ক, ত, র। অনুসর্গের খণ্ডিত রূপ হিসেবে এই বিভক্তিগুলিকে ধরা হয়। এই বিভক্তিগুলি প্রাচীন বাংলায় এভাবে ব্যবহৃত হতো, কিন্তু এখন এগুলি এই রূপে আর ব্যবহার হয় না। কে, তে, রে এই রূপে এখন বিভক্তিগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আবার প্রয়োগের দিক থেকে দেখলে বাংলায় দুই ধরনের বিভক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন –
ক) শব্দ বিভক্তি
খ) ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি

এখন এই দুটি বিভক্তি নিয়ে বিশদে আলোচনা করবো বন্ধুরা। মন দিয়ে দেখো।

শব্দ বিভক্তি

এই বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নামপদ গঠন করে বাক্যের মধ্যে। নামপদ গঠনের মাধ্যমে বাক্যের বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া বা অব্যয় এই পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে শব্দ বিভক্তি। বাংলায় শব্দ বিভক্তিগুলি হল – ‘এ’, ‘কে’, ‘তে’, ‘র’, ‘রে’ এবং ‘শূন্য’ বিভক্তি। এর মধ্যে ‘এ’ আবার ‘য়’-রূপে, ‘র’ ‘এর’-রূপে এবং ‘তে’ আবার ‘এতে’ রূপেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
দাঁড়াও দাঁড়াও জটিল হয়ে যাচ্ছে না সবটা! চলো যাই উদাহরণে। এক্ষুনি সহজ হয়ে যাবে।

আপনি আমায় ডেকেছেন?
আপনি আমাকে এই কবিতার ব্যাখ্যা লিখতে বলেছেন।
আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া ঘুরে মরি পলে পলে।

তিনটি বাক্যের প্রথমটি দেখো বন্ধুরা।
আমি শব্দের সঙ্গে এ(য়) বিভক্তি যুক্ত হয়ে আমায় হয়েছে। আবার পরের বাক্যেই আমি শব্দের সঙ্গে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে আমাকে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাক্যটিতে অনেকগুলি বিভক্তি আছে।
দেখে নাও বন্ধুরা –
কবিতা + র = কবিতার
লেখা + তে = লিখতে
আপনা + রে = আপনারে
ঘুর্‌ + এ = ঘুরে
পল্‌ + এ = পলে
তাহলে বুঝতে পারলে কীভাবে এই শব্দ বিভক্তিগুলি ব্যবহৃত হয়।

এখন জানতে হবে শূন্য বিভক্তি বিষয়টি ঠিক কী?

আসলে যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলেও তাকে বাইরে থেকে বোঝা যায় না, বিভক্তিটির উপস্থিতি দেখা যায় না তাকেই শূন্য বিভক্তি বলা হয়। আশা করি তোমাদের উত্তর পেয়ে গেছো বন্ধুরা। সাধারণত দেখবে বাক্যে যে নাম ব্যবহার হয় তার সঙ্গে শূন্য বিভক্তি যুক্ত হয়ে থাকে। এবারে চলে আসি ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তির আলোচনায়।

ধাতু বিভক্তি

এই বিভক্তি শুধুমাত্র ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ তৈরি করে থাকে। কাল বা পুরুষ অনুযায়ী এই বিভক্তির প্রয়োগ বদলে যায়। ধাতু বিভক্তি আবার চার রকমের হয়ে থাকে। দেখে নাও বন্ধুরা –

১) পুরুষ বিভক্তি – ই, ইস, এন
২) প্রকার বিভক্তি – ছি, ছিস, তাম
৩) কাল বিভক্তি – লো, বে
৪) ভাব বিভক্তি – বেন, রো

বোঝা গেল না নিশ্চয়। দাঁড়াও উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।
তুই কাজটা করিস।
তিনি কাজটা করেন।
আমি কাজটা করছি।
আমি দুপুরে ঘুমাতাম।
তনু এ কী করলো!
বাবা কাল বাজার করবে।
আপনি এই কাজটা করে রাখবেন।
তুমি এখনই কাজটা শুরু করো।

এই যে বাক্যগুলো পরপর রয়েছে ভালো করে খেয়াল করে দেখো এর ক্রিয়াপদগুলোর দিকে। তাহলেই বুঝতে পারবে ক্রিয়াপদগুলির মধ্যে ধাতুর সঙ্গে কীভাবে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
আমি একটু বিশ্লেষণ করে দিই তোমাদের সুবিধার জন্য।

কর্‌ + ই = করি ;
কর্‌ + ইস্‌ = করিস ;
কর্‌ + লো = করলো
ঘুমা + তাম = ঘুমাতাম;
কর্‌ + বে = করবে;
রাখ্‌ + বেন = রাখবেন

এইভাবে বিভক্তিগুলি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে। এগুলিকে ক্রিয়াবিভক্তি বা ধাতু বিভক্তি বলে। এছাড়াও অর্থাৎ শব্দ বিভক্তি আর ধাতু বিভক্তি ছাড়াও আরেক প্রকার বিভক্তি রয়েছে যাকে বলা হয় তির্যক বিভক্তি। এ এবং তে বিভক্তি বহু কারকে ব্যবহৃত হয় বলে একে তির্যক বিভক্তি বলে।

এই ছিল আজকের ক্লাস। আশা করি বিভক্তির পুরো বিষয়টি বুঝতে তোমাদের কোনো অসুবিধে হয়নি। আজকের মতো ছুটি। দেখা হবে নিশ্চয় আবার পরের ক্লাসে।

দশম পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → প্রত্যয়


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখাটি, অডিও, ভিডিও বা অন্য কোন ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখক পরিচিতিঃ

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

Bivokti