goniter-jadu-3
Article (প্রবন্ধ)

গণিতের জাদু – বিভাজ্যতা | তৃতীয় পর্ব

এই প্রবন্ধটি গণিতের জাদু সিরিজের তৃতীয় পর্ব। যদি প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে 0, 1, 2, 3, 4, 5 এবং 6 এর বীজগাণিতিক নিয়মে বিভাজ্যতার ব্যাখ্যা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রথম পর্ব  ও দ্বিতীয় পর্ব যদি আপানার পড়া না থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করবো এই লিঙ্কে ক্লিক করে প্রথম পর্বটিদ্বিতীয় পর্ব পড়ে নেবার।

7 দ্বারা ভাগ : রহস্যময়?

যেকোনো সংখ্যার এককের ঘরের সংখ্যা নিয়ে তাকে 5 দিয়ে গুণ করে বাকি পরে থাকা দশক থেকে শুরু করে সংখ্যাটির সাথে যোগ করলে যোগফল যদি 7 দ্বারা বিভাজ্য হয়, মূল সংখ্যাটি 7 দ্বারা বিভাজ্য হবে। অর্থাৎ সংখ্যাটি abc কে 7 দ্বারা বিভাজ্য হতে হলে ab+5c, 7 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। কেন সেটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

কি? ঘোটালা লাগছে?

আচ্ছা, আমাদের প্রিয় 362880 সংখ্যা দিয়ে চেষ্টা করা যাক, 7 দিয়ে ভাগ না করে।

প্রথমে দেখি 362880, 7 দ্বারা বিভাজ্য কিনা। নিয়ম প্রয়োগ করে যোগফল পাই 36288+ 5 ×0 = 36288।

এখন প্রশ্ন এটি কি আদৌ 7 দ্বারা বিভাজ্য?

তাহলে দেখি 36288, 7 দ্বারা বিভাজ্য কিনা। নিয়ম প্রয়োগ করে পাই 3628+5×8=3628+40।

এরকম ভাবে চলতে থাকি 3668 এর বিভাজ্যতা নির্ণয় করার জন্য। 

3668 এ নিয়ম প্রয়োগ করে পাই 366+5×8= 366+40 = 406

406এ নিয়ম প্রয়োগ করে পাই 40+5×6 = 40+30 =70

স্পষ্টতই 70, 7 দ্বারা বিভাজ্য। অতএব মূল 362880 সংখ্যাটি 7 দ্বারা বিভাজ্য।

কিন্তু কেন এরকম হলো?

ধরা যাক সংখ্যাটি abc। সুতরাং নিয়ম প্রয়োগ করলে বলা যায় আমাদের পরীক্ষা করতে হবে ab+5c, 7 দ্বারা বিভাজ্য কিনা। এখানে 5c যোগ না করে 2c বিয়োগ ও করা যায় ab থেকে। কারণ ab -2c = ab + 5c -7c। এখন কি একটি পূর্ণসংখ্যা হওয়ায় 7c, 7এর গুণিতক। একটু আগেই বিভাজ্যতার শর্ত হিসাবে প্রমাণ করেছি ab + 5c, 7 এর গুণিতক হওয়া আবশ্যিক। সুতরাং ab + 5c-7c = ab -1c ও 7এর গুণিতক হবে।

এখন abc কে আমি লিখছি,

abc = 100a +10b +c

= 100a +10b +50c -49c

= 10×(10a+b+5c) -49c

= 10 × (ab+5c) – 49c

বা,

abc = 100a +10b +c

= 100a +10b +21c -20c

= 10 × (10a+b -2c) + 21c

= 10 × (ab-2c) +21c

এখানে 49c বা 21c উভয়েই 7 দ্বারা বিভাজ্য।

সুতরাং abc কে 7 দ্বারা বিভাজ্য হতে গেলে সমীকরণের অন্য অর্ধ, 10x(ab+5c) বা 10x (ab-2c), 7 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। এখন গুণের নিয়মানুসারে আমরা জানি দুটি সংখ্যার গুণফল তৃতীয় একটি মৌলিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হলে, কমপক্ষে একটি সংখ্যা ওই মৌলিক সংখ্যার গুণিতক। যেহেতু 10, 7 এর গুণিতক না, সুতরাং ab -2c ও ab + 5c, 7 দ্বারা বিভাজ্য।

এখন abc কে আমি লিখতে পারি,

abc = (1/10) × 10x(abc)

=1/10×10 × (100a+10b+c)

তবে ab+5c কে আমি লিখতে পারি

ab+5c = (1/10) × 10 × (ab) + 5c

= (1/10) × 10 × (10a+b) + 5c

= 1/10 × (100a+10b) +5c

= 1/10 × (100a+10b+c – c) +5c

= 1/10 × (abc-c) + 5c

=  (1/10) × (abc) + 4.9 c

অতঃএব বলা যায় (1/10)x(abc) = ab+5c – 4.9c বা abc = 10ab +50c -49c

এখন স্পষ্টতই 49c, 7 দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং abc কে 7 এর গুণিতক হতে গেলে 10ab +50c কে 7 এর গুণিতক হতে হবে। অর্থাৎ, ab +5c কে 7 এর গুণিতক হতেই হবে। (420, 7 এর গুণিতক হলে 42, 7 এর গুণিতক হবেই)।

8 দ্বারা ভাগ : সংখ্যার শেষ তিনটি অঙ্ক 8 দ্বারা বিভাজ্য

 

অনেকটা 4 এর নিয়মের মতোই, এখানে শেষ দুটি না নিয়ে শেষ তিনটি অঙ্ককে 8 দিয়ে ভাগ করলে যদি মিলে যায় তবে সংখ্যাটি 8 এর গুণিতক। যেমন 362880এর শেষ তিনটি অঙ্ক 880, যেটাকে 8 দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল 100 আসে এবং ভাগশেষ 0 হয়। সুতরাং সংখ্যাটি 8 দ্বারা বিভাজ্য।

এর কারণ কি?

1000 কে 8 দিয়ে ভাগ করলে 125 আসে। তাহলে 362880কে যদি 362000 + 880 লেখা যায় তবে উভয়কে পৃথক পৃথক ভাবে 8 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। 362000কে লিখতে পারি 362 x 1000 যেটাকে 8 দিয়ে ভাগ করলে আসে 362 x 125। পূর্ণ সংখ্যা। এবার যদি 880 কে 8 দিয়ে ভাগ করলে পূর্ণসংখ্যা আসে (যেটা কিনা আসছে 110) তাহলেই তাদের যোগফল পূর্ণসংখ্যা হবে। অর্থাৎ মূল 362880, 8 দ্বারা বিভাজ্য হচ্ছে।

এর পেছনেও বীজগণিত। abc একটি সংখ্যা হলে এটিকে লেখা যায় 100a +10b + c।

এখন এই পুরোটা ভাগ না করেও আমরা যদি কেবল অঙ্কগুলিকে নিয়ে একটি রাশিমালা বানাই, যেটি 8 দ্বারা বিভাজ্য, তাহলেও আমরা বলতে পারবো সংখ্যাটি 8 দ্বারা বিভাজ্য। সংখ্যার অংকসংখ্যা 3 এর থেকে বেশি হলেও শেষ তিনটিই আমাদের এক্ষেত্রে দরকার। সেটা আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কি সেই রাশিমালা?

4a+2b+c। কেন?

কারণ 100a +10b + c কে আমরা লিখতে পারি (96a+8b) +(4a+2b+c) = 8 × (12a+b) + (4a+2b+c)।

এই রাশিমালাটির প্রথম ভাগ 8 দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে 4a+2b+c, 8 দ্বারা বিভাজ্য কিনা পরীক্ষা করলেই আমরা বুঝতে পারবো তাদের সমষ্টি 100a+10b +c, 8 দ্বারা বিভাজ্য।


আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করার অনুরোধ রইল! 🙂


9 দ্বারা ভাগ : সংখ্যার মুখ্য মানগুলির যোগফল 9 দ্বারা বিভাজ্য

একদম 3 এর বিভাজ্যতার নিয়মমাফিক চলে 9 এর বিভাজ্যতার নিয়ম। 9 মানে 3×3 কিনা!!

ধরি 362880। সংখ্যাটির মুখ্য মান 3, 6, 2, 8, 8 ও 0।

এদেরকে যোগ করে পাই 3+6+2+8+8+0= 27।

আবার 27 সংখ্যাটির মুখ্য মান 2 ও 7। তাদের যোগফল 2+7 = 9। অর্থাৎ 27, 9 দ্বারা বিভাজ্য, তবে মুখ্য সংখ্যা 362880 ও 9 দ্বারা বিভাজ্য হবে।

বীজগাণিতিক ভাবে দেখতে গেলে ধরি সংখ্যাটি abc। এখন abc কে স্থানাঙ্ক মান দিয়ে লেখা যায় abc = 100a +10b +c = 99a +9b + (a +b +c) = 9 x (11a +b) + (a +b +c)।

এখন 9 x (11a +b) অংশটি যেহেতু 9 এর গুণিতক, (a +b +c) 9 এর গুণিতক হলেই আলাদা আলাদা ভাবে (a +b +c) ও 9 x (11a +b), 9 দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং abc, 9 দ্বারা বিভাজ্য।

25 অবধি আরও কিছু মৌলিক সংখ্যার বিভাজ্যতার নিয়ম:

11: জোড় স্থানের অংকের মুখ্যমানের যোগফল আর বিজোড় স্থানের অঙ্কের মুখ্যমানের যোগফলের পার্থক্য 0 বা 11 এর গুণিতক হতে হবে।

abc = 100a + 10b +c = 99a + 11b + a +c – b = 11 × (9a +b)+ {(a +c) – b}

13: ab+4c বা ab – 9c, 13 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।

17: ab – 5c বা ab + 12 c, 17 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।

19: ab +2c বা ab -17c, 19 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।

23: ab +7c বা ab -16c, 23 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।


আরো পড়ুন → প্রবন্ধ বিভাগ | বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগ | প্রযুক্তি বিভাগ

আরও কিছু যৌগিক সংখ্যার বিভাজ্যতার নিয়ম:

12: 3 ও 4 এর বিভাজ্যতার নিয়মকে মেনে চলবে।

14: জোড় সংখ্যা যা 7 দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে চলে।

15: শেষে 5 বা 0 আছে এমন সংখ্যা যা 3 এর বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে চলে।

16: শেষ চারটি অঙ্ক abcd হলে 8a+4b-6c+d, 16 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।

18: জোড় সংখ্যা যার অঙ্কগুলির যোগফল 9 দ্বারা বিভাজ্য।

21: 3 ও 7 দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে চলবে।

22: জোড় সংখ্যা যা 11এর বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে চলে।

24: 3 ও 8 এর বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে চলে।

25: শেষ দুটি সংখ্যা 25, 50, 75 বা 00 হতে হবে।

গণিতের জাদু সিরিজের, বিভাজ্যতার নিয়ম পর্বগুলি সমাপ্ত হল।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –