মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে, তা হলো উচ্চ-মাধ্যমিকে কি নিয়ে পড়বো?
এর উত্তর খুঁজতে ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত দুটি সহজ পন্থা অবলম্বন করে।
- মাধ্যমিকের পরেই কোন একটি জায়গায় Science পড়তে শুরু করে, পড়ে ভালো লাগলে তা চালিয়ে যায় অথবা বায়ো – সায়েন্স, কমার্স বা আর্টসের দিকে চলে যায়।
- উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করে, প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করে পড়া শুরু করে।
উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য তো বটেই, তার সাথে আগামী দিনের কেরিয়ারের সাফল্যের জন্য উপরিউক্ত দুটি পন্থাই আত্মহত্যার সামিল।
উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় নির্বাচন ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ারের জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং এর ফলাফল সুদূর প্রসারী। আমরা এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে ছাত্রীছাত্রদের পথনির্দেশক হিসেবে কিছু পরামর্শ দেবার চেষ্টা করবো।
আজকের পর্বে উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করবো।
আমি ভবিষ্যতে কি হতে চাই?
মাধ্যমিকে সাতটি বিষয় মন দিয়ে পড়তে হয়। কোনো বিষয় ভালো না লাগলে তাকে ঝেড়ে ফেলার উপায় থাকে না। উচ্চ মাধ্যমিক প্রিয় বিষয়গুলি নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। ইংরাজি ও বাংলা অবশ্যপাঠ্য বিষয় তাই এই দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। বাকি যে চারটি বিষয় আছে, তাদের খুব সন্তর্পণে নির্বাচন করতে হবে। কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক।
ধরো তুমি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাও, তাহলে তোমাকে জীববিদ্যা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে কিন্তু তুমি অঙ্ককে বাদ দিতে পারো। কারণ ডাক্তারির প্রবেশিকা বা ডাক্তারির ভবিষ্যত পাঠ্যে অঙ্কের কোন ভুমিকা থাকে না। তাই অঙ্কের মতো একটি ‘গুরুপাক’ বিষয়কে বাদ দিয়ে তুমি কম্পিউটার সায়েন্স অথবা কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশান নির্বাচন করতে পারো। এতে তুমি কম সময় দিয়ে বেশি নম্বর তুলতে পারবে। অনেকে ভাববেন গণিত ছাড়া কি পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন পড়া যায় নাকি?
এর উত্তর যায় না। তবে গণিতের যে যে ধারণাগুলি পদার্থবিদ্যা বা রসায়নবিদ্যা বোঝার জন্য যান দরকার সেগুলি এক – দুই মাসের চেষ্টায় আলাদা ভাবে শিখে নেওয়া যেতেই পারে।
[আরো পড়ুন – মাধ্যমিকের পরে বিজ্ঞান বিভাগ]
আবার দেখা গেল, তুমি ভবিষ্যতে পুষ্টিবিদ্যা (Nutrition) নিয়ে পড়তে চাও। এক্ষেত্রে কিন্তু তোমাকে রসায়নকে চারটি বিষয়ের মধ্যে রাখতেই হবে।
তাই ভালো নম্বর এবং সঠিক কেরিয়ারের জন্য ভবিষ্যৎ ভেবেই উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয় নির্বাচন করা উচিৎ।
ভবিষ্যতে কাজের বাজার কোন দিকে যাবে?
সাধারণত আমরা কাজের বাজারে প্রবেশ করি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর হবার পরে আর চাকুরী জীবন স্থায়ী হয় নুন্যতম 25 বছর। অর্থাৎ 2019 সালে যদি কেউ মাধ্যমিক পাশ করে তাহলে সে চাকরীর বাজারে প্রবেশ করবে অন্তত 2025 সালে আর কাজ করবে 2050 সাল অবধি। এই 30 বছরে অনেক কিছুই হয়তো পালটে যাবে।
বিশেষ করে 2020 সালের করোনা মহামারীর পরে কাজের বাজারের দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন অনিবার্য।
আর একটা উদাহরণ দেখা যাক।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে যখন ইনফর্মেশন টেকনোলজি (IT) ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে সেই সময় এই রাজ্যে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হয় এবং বহু ইঞ্জিনিয়ার সফলতার সাথে চাকুরী পায়। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিঙের বাজার যথেষ্ট প্রতিযোগিতার মুখে, তা প্রায় সবার জানা। তাই, ভবিষ্যতে কি হতে চাও তা ঠিক করতে হবে ভবিষ্যতের বাজার অনুমান করে।
[আরো পড়ুন – মাধ্যমিকের পরে কলা বিভাগ]
তোমার কি পড়তে ভালো লাগে?
ধরো তোমার ইতিহাস পড়তে খুব ভালো লাগে। অথচ ভাবছো ইতিহাস পড়লে ভবিষ্যৎ ঝরঝরে তাই সায়েন্স নিতেই হবে। তুমি কিন্তু ভুল ভাবছো। যদি ইতিহাস খুব ভালো করে পড়ো তাহলেও কিন্তু অনেক ভালো সুযোগ তোমার সামনে খুলে যেতে পারে। যেমন ইতিহাস থেকে পড়া যায় এমন একটি আকর্ষক পেশা হল নৃতত্ববিদ্যা (Anthropology)। জানলে অবাক হবে যদি কেউ স্বপ্ন দেখে যে ভবিষ্যতে সে IAS / WBCS ইত্যাদি হবে তার জন্য সেরা বিষয়গুলি কিন্তু ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
কারণ IAS / WBCS ইত্যাদি প্রবেশিকা পরীক্ষার অধিকাংশ জুড়েই থাকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
তাই বিষয় নির্বাচন করো একেবারে তোমার ভালোলাগার বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখে।
[আরো পড়ুন – মাধ্যমিকের পরে বাণিজ্য বিভাগ]
উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস দেখা
মাধ্যমিকের সাথে কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসের ফারাক অনেকটাই।
কথায় আছে, মাধ্যমিক যদি পুকুর হয় তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক হল মহাসাগর।
তাই তুমি যে বিষয়গুলি নির্বাচন করার কথা ভাবছো, সেগুলির সিলেবাস একবার ভালো করে খুঁটিয়ে দেখ। এগুলির অনেকটাই তোমার অজানা হবে তার সন্দেহ নেই, কিন্তু তুমি সিলেবাস থেকে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবে যে তোমাকে কি কি আগামী দুই বছরে পড়তে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া
“অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের একমাত্র রাস্তা” বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন
কথায় আছে অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প নেই। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে তোমার বিষয় নির্বাচনের জন্য পরামর্শ চাইতেই পারো যে কোন অভিজ্ঞ মানুষ যেমন তোমার শিক্ষক, আভিভাবক বা কোন সদ্য কলেজ পাশ করা দাদা- দিদিদের কাছে।
[আরো পড়ুন – কেরিয়ার বিভাগ | পড়াশোনা বিভাগ | প্রবন্ধ বিভাগ ]
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা