france-february-biplob
প্রশ্ন-উত্তর

ফ্রান্সের ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লব ও তার প্রভাব

ইতিহাসনবম শ্রেণি – উনবিংশ শতকের ইউরোপ – রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী সংঘাত

জুলাই বিপ্লবের ফলস্বরূপ অর্লিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপ সিংহাসন লাভ করেছিলেন। তাই তার শাসনকালকে জুলাই রাজতন্ত্র বলা হয়।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটি নবম শ্রেণির পাঠ্য, ইতিহাস বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচনার অন্তর্গত। মূল আলোচনা পড়ার জন্য এই পাতাটি দেখুন – অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন

লুই ফিলিপের শাসনকালের সময় ফ্রান্সের রাজনিতিতে আরো বিচিত্র পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন ভাবধারায় ভাগ হয়ে যায়।

রাজতন্ত্রের সমর্থক – এরা বিশ্বাস করতো যে ফরাসী সিংহাসনের ওপর অধিকার কেবল মাত্র বুড়বো রাজবংশের। লুই ফিলিপ-কে জোর করে রাজা বানানো হয়েছে। এরা মনে করতেন লুই ফিলিপ অবৈধ রাজা।

বোনাপার্টিস্ট – এরা ছিলেন মূলত নেপোলিয়নের অনুগামী। এরা নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বংশের কাউকে রাজা হিসাবে দেখতে চাইতেন।

প্রজাতান্ত্রিক – এরা রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। এদের দাবী ছিল, ভোটের ভিত্তিতে দেশের নেতা বা রাজা নির্বাচন। তৎকালীন আইনে দেশের অধিকাংশ মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

লুই ফিলিপ-কে একপ্রকার জোর করে রাজা বানানো হয়েছিল।

ফলে তার কোনরূপ জনভিত্তি ছিল না। তিনি ছিলেন একপ্রকার বুর্জোয়াদের দ্বারা পরিচালিত শাসক। জনভিত্তির অভাব ছাড়াও তাঁর সময়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা যায়।

মূলত খরার কারণে খাদ্য শস্যের মন্দা দেখা যায়। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব শিল্পে এবং বানিজ্যে পরিলক্ষিত হয়। প্রথমদিকে শিল্পপতিরা ব্যপক লাভ দেখলেও আর্থিক মন্দার ফলে তাদের লাভ্যাংশ কমতে শুরু করে। ফলে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। মানুষ রাজার এবং সরকারের উপর ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন।

এই অবস্থা চরমে পৌছায় ১৮৪৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে।

তৎকালীন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গিজোর বাসভবনের সামনে কিছু সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে রক্ষীরা তাদের উপর গুলি চালায়; বহু মানুষ নিহত হন। এই ঘটনা আন্দোলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। ফ্রান্সের মানুষ লুই ফিলিপের পদত্যাগ দাবী করে সশস্ত্র আন্দোলনে শুরু করেন। ফলস্বরূপ লুই ফিলিপ সিংহাসন ত্যাগ করে ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং এই ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ‘জুলাই রাজতন্ত্রের’ অবসান হয়। এই ঘটনাকে ফ্রান্সের দ্বিতীয় ফরাসী বিপ্লব হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়।

Philippoteaux_-_Lamartine_in_front_of_the_Town_Hall_of_Paris_rejects_the_red_flag
ফ্রান্সের রাজপথে বিক্ষোভ [সৌজন্যে – Wiki]

ফ্রান্সে ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব

তবে এই আন্দোলনের পরেও ফ্রান্স রাজতন্ত্র থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি।

রাজার অপসারণের পরে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়, যার নেতা হয় লামার্টিন। একটি এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা তৈরি হলে নেপোলিয়নের ভ্রাতিস্পুত্র লুই নেপোলিয়ন চার বছরের জন্য নেতা নির্বাচিত হন।

কিন্তু ১৮৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে অকস্মাৎ তিনি প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং তৃতীয় নেপোলিয়ন নাম নিয়ে ফ্রান্সের সিংহাসন অধিকার করেন।


[আরো পড়ুন – ভিয়েনা সন্মেলন]

ইউরোপে ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব

এই বিপ্লবের প্রভাব শুধুমাত্র ফ্রান্সেই সীমাবন্ধ ছিল না। এর প্রভাব ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পড়েছিল।

জার্মানি – বিভিন্ন রাজ্য যেমন প্রাশিয়া, হ্যানোভার, ব্যাভেরিয়া ইত্যাদি প্রদেশে গনআন্দোলন শুরু হয়। এর ফলে দেশের শাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আস।

অস্ট্রিয়া – সম্ভবত ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের সর্বাধিক প্রভাব এইখানেই পরিলক্ষিত হয়। মেটারনিকতন্ত্রের অবসান ঘটে। দেশে উদারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সুত্রপাত হয়।

ইতালি – বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। ভেনিস এবং রোমে দুটি প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি হয়।

হাঙ্গেরি – গনআন্দোলনের মাধ্যমে সায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু হয়।

Nagysallói_ütközet_Than
হাঙ্গেরিতে গণবিদ্রোহ

এছাড়াও ইউরোপের প্রায় ১৫টি দেশে এই বিপ্লবের ব্যপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল।

আরো পড়ো → ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বহিঃপ্রকাশ


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –