bish-shotoker-bharote-dolit-rajniti-andolon-
Madhyamik

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ- চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

ইতিহাসদশম শ্রেণি – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (পর্ব – ৩)

গত পর্বে আমরা বিশ শতকের ভারতে ছাত্র আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ-চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানবো।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও তার সংবিধানের প্রাপ্তির ইতিহাসে দলিত বা সমাজের প্রান্তিক মানুষের ভূমিকা অনস্বিকার্য। তাদের রাজনীতিতে ঠিক কি ভূমিকা ছিল জানার পূর্বে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক দলিত কারা?

দলিত

যে সকল মানুষ আর্থসামাজিকভাবে সব সময়েই পিছিয়ে তাদেরকেই সমাজে দলিত বলা হয়। প্রধানত বর্ণাশ্রমের যুগে যারা সমাজের সর্বাপেক্ষা নিম্নে ছিল [এবং অন্য সকল বর্ণ দ্বারা অস্পৃশ্য হিসাবে গণ্য হত] চতুর্বর্ণেরও পরে পঞ্চম বর্ণ অর্থাৎ অতিশূদ্র বা চণ্ডাল, তারাই মূলত দলিত।

তবে পরবর্তীকালে এই দলিত নামটি পরিবর্তিত হয়ে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি হিসাবে এঁনারা পরিচিত হন।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

উনবিংশ শতকের শেষার্ধে দলিত আন্দোলনের সূচনা

মহারাষ্ট্রের বর্ণপ্রথা বিরোধী আন্দোলনে জ্যোতিবা ফুলের কৃতিত্ব অসীম। স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশিরভাগ আন্দোলনই ছিল প্রধানত শহরকেন্দ্রিক, কিন্তু ফুলের নেতৃত্বে ‘সত্যশোধক সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত গ্রামকে কেন্দ্র করে। তাঁর রচিত গুলামগিরি এই সমাজের বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত। দক্ষিণ ভারতের দলিত আন্দোলনকে প্রসারিত করতে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রীনারায়ণ গুরু।


jump magazine smart note book


তবে ভারতের দলিত আন্দোলনের কথা উঠলে যার নাম সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তিনি হলেন ভীমরাও আম্বেদকার। তিনিই প্রথম অনুভব করেছিলেন এই দলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে তাদের প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকার।

আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দলিত সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের দাবী উঠলে গান্ধী-আম্বেদকর বিরোধিতা শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকারও নিম্নবর্ণের হিন্দু মানুষদের সাথে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভাজনকে আরো উস্কে দিতে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

গান্ধীজীসহ বহু উচ্চবর্ণের নেতৃবৃন্দই বর্ণের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা, কর্ম, রাজনীতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। গান্ধীজীর এই দাবিতে অনশন শুরু করলে আম্বেদকর ও গান্ধীজীর প্রত্যক্ষ আলোচনা হয় এবং শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই কিছু সমঝোতা করে বিষয়টির সমাধানে পৌঁছান।

1932 সালের 24শে সেপ্টেম্বরের এই চুক্তি ইতিহাসে পুনা চুক্তি নামে পরিচিত।


ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা↓


দলিত আন্দোলন

এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও আম্বেদকর এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন তাই তিনি কংগ্রেসের সাথে দূরত্ব শুরু করেন এবং একটি স্বতন্ত্র ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি’ গঠন করেন।

কংগ্রেসের জগজীবন রামের উদ্যোগে 1935 সালে ‘অল ইন্ডিয়া ডিপ্রেসড ক্লাসেস লিগ’ গঠিত হয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে এই নিম্নবর্ণের হিন্দুরা অংশগ্রহণ করলেও জাতীয় রাজনীতি থেকে তাদের দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। স্বয়ং আম্বেদকরও ভারতের স্বাধীনতা লাভ পরবর্তী সময়ে এই দলিত সম্প্রদায়ের কি অবস্থা হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কংগ্রেসও এই সময় ক্ষমতা হস্তান্তর ও বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাস্ত থাকার দরুণ এই বিষয়টি গুরুত্বের বাইরে চলে যায়। 1946 এর পরবর্তী সময়ে বলা চলে ঐ দলিত সংগঠনগুলির অস্ত্বিত্বই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে দলিত আন্দোলনে আম্বেদকর ছিলেন প্রধান কাণ্ডারি। 1920 সালে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের সময় থেকেই তাঁর অভ্যুথান ঘটে। এই অবহেলিত শ্রেণির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর

গান্ধীজীর সাথে পুনা চুক্তি থেকে শুরু করে কংগ্রেসের সাথে বিরোধিতা এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় সংবিধানের খসরা কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবার পরেও তাঁর এই লড়াই একইভাবে অব্যাহত ছিল। তাঁরই প্রচেষ্টায় অস্পৃশ্যতা সংবিধানে অপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। তিনি নবগঠিত মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি মন্ত্রীসভা ত্যাগ করেন। শেষ জীবনে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

[সেই সময় তাঁর অনুগামি লক্ষ লক্ষ মাহার উপজাতিভুক্ত মানুষ ধর্মান্তরিত হয়।]

নমঃশূদ্র আন্দোলন

পূর্ব বাংলায় এক নমঃশূদ্র পরিবারে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম হয়। যিনি প্রধানত নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষ্ণব ভাবধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে ছিলেন। তিনি এই সম্প্রদায়েরই একটি অংশকে নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায় গঠন করেছিলেন। নমঃশূদ্রদের উন্নয়নের জন্য তিনি ‘নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশান’, ‘নিখিল বঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি’, প্রভৃতি তৈরি করেছিলেন। এই আন্দোলনে পরবর্তী সময়ে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বিরাট চন্দ্র মণ্ডল, মুকুন্দ বিহারী মল্লিক প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন।

অধ্যায় সমাপ্ত। আরো পড়ো → দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X_hist_7c