শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায় – ধাতুবিদ্যা
ধাতুবিদ্য অধ্যায়ের আগের দুটি পর্বে আমরা কয়েকটি ধাতু ও তাদের সংকর এবং ধাতু নিষ্কাশনের নীতি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা ধাতুর ক্ষয় ও ক্ষয় নিবারণ নিয়ে আলোচনা করবো।
ধাতুর ক্ষয়ের কারণ কি?
সক্রিয় ও অতিসক্রিয় ধাতুগুলি দ্বারা প্রস্তুত পদার্থ দীর্ঘদিন ধরে আবহাওয়ার সংস্পর্শে এসে বায়ুতে উপস্থিত অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে। ফলে তার ওপর রাসায়নিক যৌগের আস্তরণ পড়ে আথবা সেই বিক্রিয়ায় সৃষ্ট যৌগটি জলে দ্রবীভূত হয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে স্তরটি ক্ষয়ে যায়।
UPDATE:মাধ্যমিক পরীক্ষার ভীতি কাটাবার সেরা উপায়↓
লোহার মরচে কি লোহায় ক্ষয়ের প্রভাবে সৃষ্ট হয়?
লোহা দিয়ে তৈরী কোনো দ্রব্যের উপর লালচে বাদামি বর্ণের যে আস্তরণ চোখে পড়ে, সেটিই মরচে। বিশুদ্ধ লোহায় মরচে পড়ে না, শুষ্ক বায়ুতে রাখলে লোহায় মরচে পড়ে না, আবার পাতিত বা ফুটিয়ে দ্রবীভূত বায়ু বের করে দেওয়া হয়েছে এমন জলে, লোহা রাখলে মরচে পড়ে না। কিন্তু সামান্য অশুদ্ধি মিশ্রিত লোহা সাধারণ জলের বা জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে থাকাকালীন, বায়ুর সাথে বিক্রিয়া করে মরচে তৈরী করতে পারে।
এটির সাধারণ সংকেত Fe2O3 (ফেরিক অক্সাইড); কিন্তু এর সংকেতে কয়েক অণু জলের উপস্থিতি দেখা যায়। মরচের বর্ণ জলের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে জলের অণুর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। তাই এর সাধারণ সংকেতকে পরিবর্তিত করে Fe2O3, x H2O [x হল জলের অণুর সংখ্যা] লেখা হয়।
মরচে পড়ার প্রকৃত কারণ দুটি
- অশুদ্ধি- যেটি ক্ষুদ্রতম তড়িৎকোষের সৃষ্টি করে।
- বাতাসের অক্সিজেন, যা জলের উপস্থিতিতে লোহাকে জারিত করে ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3)তৈরী করে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান |
মরচে নিবারণের উপায় কি?
1) লোহার তৈরি বস্তুর উপর আলকাতরা জাতীয় জলবিকর্ষী পদার্থের আস্তরণ দেওয়া।
2) সক্রিয়তর ধাতুর (যেমন জিঙ্ক [Zn]) প্রলেপ; যেটির যৌগ নিষ্ক্রিয়রূপে অবস্থান করতে পারে।
3) অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় ধাতুর প্রলেপ, যেমন ক্রোমিয়াম নিকেল বা রুপোর প্রলেপ।
বায়ুতে রাখলে তামার রং সবুজ হয়ে যায় কেন?
তামাকে উষ্ণ আর্দ্র বায়ুতে রাখলে তামার ওপর একটি সূক্ষ্ম আস্তরণ পড়ে। এটি কপার অক্সাইড (CuO)। এটি ক্রমে বায়ুর জলীয় বাষ্প এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতিতে কিউপ্রিক কার্বনেট [CuCO3] এবং কিউপ্রিক হাইড্রক্সাইড [Cu(OH)2] এ পরিণত হয়। এটির রং সবুজ। তাই তামা পুরোনো হলে সেটি সবুজ বর্ণ ধারণ করে। সবুজ বর্ণের এই যৌগটির নাম ক্ষারীয় কপার কার্বনেট [CuCO3, Cu(OH)2]
বায়ুতে সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) উপস্থিত থাকলে কপার অক্সাইড (CuO) বায়ুর অক্সিজেনের (O) সাহায্যে কপার সালফেট (CuSO4) তৈরী করে। এর ফলে তামা তুঁতে নীল বর্ণ ধারণ করে। নীল বর্ণের এই যৌগটির নাম ক্ষারীয় কপার সালফেট [CuSO4, 3 Cu(OH)2]
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
জিঙ্ক ও অ্যালুমিনিয়াম কিভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়?
সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে জিঙ্ক রাখলে জিঙ্কের ওপর ক্ষারকীয় জিঙ্ক কার্বনেটের [ZnCO3, 3 Zn(OH)2] একটি সাদা আস্তরণ তৈরী হয়। ফলে আর্দ্র বায়ুতে জিঙ্ক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ঠিক একই ভাবে আর্দ্র বায়ুতে অ্যালুমিনিয়ামের ওপরেও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3) এর একটি সূক্ষ্ম সাদা আস্তরণ পড়ে।
জিঙ্ক ও তামার ক্ষতিকারক প্রভাব
যদি তামা (Cu), দস্তা (Zn) দিয়ে তৈরি পাত্রে আম্লিক খাবার রাখা হয়, তবে আম্লিক পদার্থে জৈবিক অ্যাসিড তামা, দস্তা ইত্যাদির সঙ্গে বিক্রিয়া করে দ্রাব্য বিষাক্ত পদার্থ সৃষ্টি করে। যা আমাদের খাদ্যের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তাই তামা, দস্তা বা জিঙ্কের পাত্রে বা প্রলেপ দেওয়া পাত্রে খাবার রাখা উচিত নয়। এই ধরনের পাত্রে টক ফল, আচার অথবা চাটনি রাখা উচিত নয়।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-PSc-8.5-c