chonnochara-class-8
WB-Class-8

ছন্নছাড়া | অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত | কবিতার সম্পূর্ণ আলোচনা

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বাংলা। ছন্নছাড়া (কবিতা) chonnochara

কবি পরিচিতি

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত নোয়াখালিতে। বিচিত্র কর্ম – অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই লেখকের উল্লেখযোগ্য গল্প – উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে বেদে, বিবাহের চেয়ে বড়, প্রাচীর ও প্রান্তর, অকালবসন্ত, অধিবাস, যতনাবিধি, সারেং প্রভৃতি। অমাবস্যা, আমরা, প্রিয়া ও পৃথিবী, নীল আকাশ, আজন্মসুরভি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। কল্লোল পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এই লেখক – কবি কল্লোলযুগ, কবি শ্রীরামকৃষ্ণ, পরমপুরুষ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ প্রভৃতি স্মরণীয় প্রবন্ধ গ্রন্থেরও প্রনেতা।


আরো পড়ো → পল্লীসমাজ । সম্পূর্ণ আলোচনা

ছন্নছাড়া কবিতার উৎস

কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থ থেকে ছন্নছাড়া কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

ছন্নছাড়া কবিতার বিষয়বস্তু

কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর ছন্নছাড়া কবিতার মধ্য দিয়ে সমাজের একটি বিশেষ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। প্রথমেই আমাদের বুঝে নিতে হবে ছন্নছাড়া কথার অর্থ কি?

ছন্নছাড়া বলতে চাল চুলো হীন বা উদ্দেশ্যহীন অবস্থাকে বোঝানো হয়।

কবিতায় আমরা তিন ‘ছন্নছাড়া’ যুবকের উল্লেখ পাই। তাদের জন্য আমাদের সমাজের কাছে কিছুই নেই, শিক্ষা নেই, চাকরী নেই, কাজ নেই, ঘর নেই, হাসপাতাল নেই, তাদের ভালোবাসার লোক নেই।  সামাজিক নৈরাজ্য বা হতাশার শিকার এই যুবকদের কোন ভবিষ্যতের ঠিকানা নেই। তারা যেন সমাজের কাছে অচ্ছুৎ। তাই তো ট্যাক্সির ড্রাইভার তাদের কাছে যেতে চায় না।

সমাজ তাদের জন্য কিছু না দিতে চাইলেও, ঐ ‘ছন্নছাড়া’ যুবকদের কিন্তু অনেককিছু দেবার আছে। তাই কবির ট্যাক্সিতে তারা বেওয়ারিশ ভিখারির লাশ সজত্নে তুলে নেয়। একজন ‘কেউ নেই, কিছু নেই’ অপরিচিত ভিখারির জন্য ছন্নছাড়া যুবকদের মানবিকতার অভাব হয় না। কিন্তু ‘ভব্যতা এবং শালীনতার’ ধ্বজাধারী কবি সেখানে থাকতে পারেন না, ট্যাক্সি ছেড়ে নেমে আসেন।


ছন্নছাড়া কবিতার বিষয়বস্তু খুব সহজে বুঝে নাও এই ভিডিও থেকে↓


কবিতায় আমরা একটি গাছের বর্ণনা পাই, প্রথমে কবি যখন তা লক্ষ করছেন তা ছিল ‘রুক্ষ, রুষ্ট, রিক্ত, জীর্ণ’, উদ্দেশ্যহীনভাবে তার ডাল পালা ছড়িয়ে রেখেছে। এই প্রায় শুকিয়ে যাওয়া গাছটির মধ্যে সবুজের কোন উপস্থিতি নেই। নেই ‘এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা’। কিন্তু কবি যখন ফিরে আসার সময় গাছটিকে দেখেন তখন গাছটির অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গাছটির ‘শুকনো বৈরাগ্য বিদীর্ণ করে বেরিয়ে পড়েছে হাজার হাজার সোনালি কচি পাতা’। সেখানে ফুলের আবির্ভাব হয়েছে, রং বেরঙের পাখিও উড়ে এসেছে। কবি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন ‘কঠোরের প্রচ্ছন্নে মাধুর্যের বিস্তীর্ণ আয়োজন’।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

আচ্ছা, গাছটির এই হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ কি?

কবি এই গাছটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে বাইরে থেকে যা রুক্ষ, রুষ্ট শুকনো বলে মনে হয় আদপে তা হয়তো নয়।  তার মধ্যেও আছে সম্ভাবনা। ঠিক ঐ তিন যুবকের মতো, যাদের সমাজ ‘নেই রাজ্যের’ বাসিন্দা বলে মনে করে, তাদের মধ্যেও বেঁচে আছে আশা – সম্ভাবনা। তাই কবি বলেন –

‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে – প্রাণ থাকলেই স্থান আছে মান আছে।’

ছন্নছাড়া কবিতার নামকরণের সার্থকতা

এই কবিতাটি কবির এক সামাজিক দলিল। কবিতার মুখ্য চরিত্র ‘ছন্নছাড়া’ একদল যুবক। সমাজ তাদের অবহেলা করে, সামাজের কাছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই। ঠিক যেমন গুরুত্ব নেই পাড়ার মোড়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পাতা হীন রুক্ষ গাছটির। কিন্তু ঐ ‘নেই রাজ্যের’ বাসিন্দা যুবকদের মধ্যেও মানবতা আছে, অজানা অচেনা পথের গাড়ি চাপা পড়া ভিখারিকে অবলীলায় তারা ট্যাক্সিতে তুলে নেয়, উল্লাস করে ওঠে ‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে’। কবি এখানেই সম্ভাবনা দেখতে পান। ঠিক একইভাবে ঐ শুকনো রুক্ষ গাছটি ফুলে ভরে উঠলে কবি তার মধ্যে প্রাণ খুঁজে পান। তাই আদতে যা ছন্নছাড়া বলে মনে হয়, তা আর ছন্নছাড়া থাকে না।

আধুনিক শহুরে মানব সভ্যতার এই অপ্রয়োজনীয় বেকার ‘ছন্নছাড়া’ যুবকের দলের সম্ভাবনা সমাজের কাছে ফুটিয়ে তুলতে, এই ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ যথার্থ।

সমাপ্ত। আরো পড়ো → দাঁড়াও কবিতার সম্পূর্ণ আলোচনা

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_Bengali_chonnochara