যোজ্যতা অর্থে যোজন করার ক্ষমতা। যোজন অর্থে যুক্ত।
যোজ্যতার ধারণা ভালো করে বোঝার জন্য আমাদের চট-পট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করতে হবে।
প্রশ্ন – পরমাণু যুক্ত হতে চায় কেন?
উত্তর – স্থায়ী হবে বলে।
প্রশ্ন – পরমাণু অস্থায়ী কেন?
উত্তর – কারণ তাদের শেষ কক্ষপথে 2 বা 8 টি ইলেক্ট্রন নেই তাই।
প্রশ্ন – 2 বা 8 টি ইলেক্ট্রন থাকলে কি হবে?
উত্তর – তাহলে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভ করবে, এবং ওই নিষ্ক্রিয় গ্যাসটির পরমাণুর মতোই এই নবগঠিত এবং বা পরমাণুটিও স্থায়িত্ত্ব পাবে।
প্রশ্ন – তাহলে পরমাণুর শেষ কক্ষপথে কতগুলি করে ইলেক্ট্রন আছে?
উত্তর – সেটি বলবে তাদের প্রোটন সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক। এর থেকেই নির্ধারিত হয় কার কাছে কি ইলেক্ট্রন বিন্যাস আছে।
নিচে 1 থেকে 20 অবধি মৌলের ইলেক্ট্রন বিন্যাস এবার দেখে নেওয়া যাক।
একটা ব্যাপার এখানে লক্ষ্যণীয় যে কিছু কিছু মৌলের শেষ কক্ষপথে 1, 2 বা 3টি ইলেক্ট্রন আছে। আবার কিছু মৌলের শেষ কক্ষপথে 4, 5, 6 বা 7টি ইলেক্ট্রন আছে। আবার He এর 2টি এবং Ne ও Ar এর 8টি ইলেক্ট্রন আছে।
যারা এই মৌলগুলির কাছাকাছি আছে, তারা এদের মতো ইলেক্ট্রন বিন্যাস পেতে চায়। সুতরাং যাদের 1, 2 বা 3টি ইলেক্ট্রন আছে তারা সেটি ত্যাগ করে He, Ne বা Ar এর মতো গঠন চায়। আর যাদের 4, 5, 6 বা 7টি ইলেক্ট্রন আছে তারা যথাক্রমে 4, 3, 2 বা 1টি ইলেক্ট্রন গ্রহণ বা share করে He, Ne বা Ar এর মতো গঠন চায়।
[আরো পড়ুন – অ্যাসিড কাকে বলে?]
এই মৌলগুলি যতগুলি ইলেক্ট্রন আদানপ্রদান করে সেটিই তার যোজ্যতা।
তাহলে বলা যায় যে মৌলগুলির যোজ্যতা যথাক্রমে –
অর্থাৎ যোজ্যতার সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় যে :
নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেক্ট্রনিক বিন্যাস পেতে পরমাণু বা মূলক যতগুলি ইলেক্ট্রন গ্রহণ, ত্যাগ বা ভাগাভাগি (Share) করে সেই সংখ্যাকে তার যোজ্যতা বলে।
এখন অধাতুদের যোজ্যতা একটু বিশেষ ভাবে দেখতে হবে।
কারণ তাদের যোজ্যতা পরিবর্তনশীল। এর মুখ্য কারণ, তারা ইলেক্ট্রন শুধু গ্রহণ করে না, ওপর অধাতুর সাথে বসলে, ইলেক্ট্রন ভাগাভাগিও করে। এই কারণে এদের দুই ধরণের যোজ্যতা দেখা যায়। H-ঘটিত যোজ্যতা ও O-ঘটিত যোজ্যতা। ধাতুর সাথে যেকোনো অধাতুই H-ঘটিত যোজ্যতা প্রদর্শন করে, কারণ এই যোজ্যতা গঠিত হয় ইলেক্ট্রন নিয়ে। যেমন ধাতু-রা অধাতুকে ইলেক্ট্রন দেয়, তেমন H সাধারণতঃ অপর অধাতুকে ইলেক্ট্রন দেয়।
তাই ধাতুর সাথে অধাতু বসলে H ঘটিত যোজ্যতা (এর তালিকা ওপরে দেওয়া হয়েছে)। আর অধাতুর সাথে কোনো অধাতু বসলে O-ঘটিত যোজ্যতা প্রদর্শিত হয়। কারণ এই যোজ্যতা ভাগাভাগির জন্য সৃষ্টি হয়। অধাতু অপর অধাতুর সাথে যেমন ইলেক্ট্রন শেয়ার করে, O ও অপর অধাতুদের সাথে ইলেক্ট্রন শেয়ার করে। তাই অধাতুর সাথে অধাতু বসলে O ঘটিত যোজ্যতা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ
CO2, H2CO3, CO, C2H2, N2O, NO, HNO2, N2O3, NO2, N2O4, HNO3, N2O5, SiO2, SiO, P2O3, P2O5, H3PO3, H3PO4, H2S, SO2, SO3, H2SO3, H2SO4, Cl2O, Cl2O3, Cl2O5, Cl2O7, HCl, HOCl, HClO2, HClO3, HClO4
এখানে লক্ষ্যণীয় যে কোনো কোনো যৌগে 2 এর থেকে বেশি মৌল রয়েছে। সেখানে অনেকগুলি মৌলের অনেকগুলি করে পরমাণু ইলেক্ট্রন ভাগাভাগি করে একসাথে বসে আছে। এদের আচরণ কিন্তু একটি মৌলের পরমাণুর মতনই, কেবল ক্ষেত্রবিশেষে এদের ভেঙ্গে এদের উপাদান মৌলগুলিকে আলাদা করা যায়। এদেরকে মূলক বলে। যেমন, CO3, NO2, NO3, PO3, PO4, SO3, SO4, OCl, ClO2, ClO3, ClO4 এদেরও যোজ্যতা বর্তমান। এদের যোজ্যতার হিসেব করা হয় খুব সহজ ভাবে। দেখার মতো বিষয় যে এদের সবার মধ্যেই O বর্তমান।
তাহলে এদের যোজ্যতা হিসাব করবো কি করে?
খুব সহজে। এদের অপর অধাতুটির O-ঘটিত যোজ্যতাকে যদি x ধরি, আর O এর যোজ্যতা যদি হয় 2, তবে মূলকের যোজ্যতা y মানলে –
y = x-2×n যেখানে n মানে O এর সংখ্যা। কোথায় কত x নিতে হবে সেটিও n মানে অক্সিজেন পরমাণুর সংখ্যার ওপর নির্ভর করবে।
যেমন NO3. এক্ষেত্রে O এর সংখ্যা n=3 আর N এর x=5. তাহলে ফর্মুলায় ফেলে পাই
y = x-2×n বা y = 5-2×3 = 5-6 = -1
অর্থাৎ NO3 এর যোজ্যতা 1 এবং এর আয়নের চার্জও -1।
এখন কেবল জানতে হবে n= কত হলে x= কত নিতে হবে।
N-এর ক্ষেত্রে –
n=2, x=3
n=3, x=5
C-এর ক্ষেত্রে-
n=3, x=4
P-এর ক্ষেত্রে-
n=3, x=3
n=4, x=5
S-এর ক্ষেত্রে-
n=3, x=4
n=4, x=6
Cl-এর ক্ষেত্রে-
n=1, x=1
n=2, x=3
n=3, x=5
n=2, x=3
[আরো পড়ুন – বল ও গতি (নিউটনের গতিসূত্র ও বলের সংজ্ঞা)]
এছাড়াও H ঘটিত মূলক পাওয়া যায়, যেখানে যোজ্যতা H ঘটিত অধাতুর যোজ্যতা দ্বারা নির্ধারিত হয়।
যেমন NH4, এই মুলকে N এর যোজ্যতা যদি x হয় আর মূলকটির যোজ্যতা y হলে ফর্মুলা হবে
y = n×1-x যেখানে n= H পরমাণুর সংখ্যা এবং x = মৌলের H ঘটিত যোজ্যতা।
তাহলে NH4 এর যোজ্যতা?
y = n×1-x = 4×1-3 = 4-3 = +1
সম্পূর্ণ ব্যপারটা বোঝা গেল কি?
যোজ্যতা সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্ন নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো।
নবম শ্রেণির আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লেখার লিঙ্ক
জীবনবিজ্ঞান – সালোকসংশ্লেষ
ভৌতবিজ্ঞান – পরিমাণ ও একক
ভৌতবিজ্ঞান – সরণ, বেগ ও ত্বরণ
বাংলা – ধীবর বৃত্তান্ত
বাংলা – নোঙর
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা