rabindranath-shantiniketon
প্রশ্ন-উত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা

ইতিহাসদশম শ্রেণি – সঙ্ঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ


[এই প্রশ্ন উত্তর পর্বটি দশম শ্রেণীর ইতিহাস বিভাগের পঞ্চম অধ্যায় বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা আলোচনার অন্তর্গত।]

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কালে যে সব মহাপুরুষদের আবির্ভাব হয়েছিল, তাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম। স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জুড়ে না থেকেও তিনি যে ভাবে মানুষের স্বাধীন মননের গড়ে ওঠার পিছনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তা অনস্বীকার্য।
এই অসীম দূরদর্শী মানুষটি বুঝেছিলেন, প্রকৃতির কোলে শিক্ষা বিস্তারের গুরুত্ব অসীম। একটি ছাত্র বা ছাত্রীর জীবনে আদর্শ, মূল্যবোধ, স্নেহ-প্রেম, সৃজনশীলতা ইত্যাদির প্রয়োজন সর্বাধিক এবং এই সব কিছুর জন্যই প্রয়োজন প্রকৃতি। যা কখনোই শহুরে ইঁট, কাঠের জঙ্গলে সম্ভব নয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিকল্প শিক্ষা চিন্তার সূত্রপাত ঘটে ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপনের মধ্যে দিয়ে।

শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রচলিত বিদ্যালয়ের ঘোর বিরোধী রবীন্দ্রনাথ এই সময়েই প্রতিষ্ঠা করলেন শান্তিনিকেতনে প্রকৃতির কোলে বিদ্যালয়।

রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপ্রাণিত হয়ে গুরু ও শিষ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন ও এই পন্থা অবলম্বন করতে চান যেখানে মুক্ত প্রকৃতির কোলে শিক্ষক শ্রদ্ধাশীল ভাবে জ্ঞান বিতরণ করবেন। রবী ঠাকুর তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল কার্যকলাপের ওপর গুরুত্ব দেন ও বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করেন। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার চিরাচরিত পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাপ্রদান যেখানে পরীক্ষায় পাশ ও উপার্জনের নিমিত্ত চাকরির উপযোগী ছাত্র তৈরি হয়, তার ঘোর বিরোধী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তাকে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হলেও নিজস্ব স্বতন্ত্রতা বজায় রাখে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থয় প্রচলিত সামাজিক বৈষম্যের তিনি বিরোধিতা করেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে তিনি স্পষ্টই বলেন ধনী, দরিদ্র উভয়কেই কঠিন ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হতে হবে।

পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আশ্রম বিদ্যালয়টিই একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

1921 সালে ভারতের চতুর্থ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রূপে বিশ্বভারতী আত্মপ্রকাশ করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিকল্প শিক্ষাচিন্তা বা শান্তিনিকেতন ভাবনা কেবলমাত্র বাংলাই নয় সমগ্র ভারত,তথা সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X_QA_Hist_Rabi_Shantiniketan