ভৌতবিজ্ঞান – দশম শ্রেনি – অধ্যায়: পর্যায় সারণি (তৃতীয় পর্ব)
বিংশ শতকের সূচনায় নতুন নতুন প্রযুক্তি আসার সাথে সাথে আমাদের পরমাণুর পারমাণবিক ভরের সত্যতা যাচাইয়ের কৌশল জানা হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে থম্পসন ও পরে রাদারফোর্ডের আবিষ্কার আমাদের পরমাণুর আকার সম্বন্ধেও ধারণা দিয়েছিলেন। মেরি কুরী, বেকেরেল প্রমুখ বিজ্ঞানীরা তেজস্ক্রিয়তার মতো আবিষ্কারও ততদিনে করে ফেলেছিলেন। কিন্তু একটি আবিষ্কারের দিকে তখনো মানুষের নজর পড়েনি তা হল গোল্ডস্টেইনের অ্যানোড রশ্মির পরীক্ষা।
উইলিয়াম ক্রুকসের ক্যাথোড রশ্মির পরীক্ষা জে. জে. থম্পসনকে পরমাণুর ইলেক্ট্রন আবিষ্কারে সাহায্য করে। তিনি সচ্ছিদ্র অ্যানোডের মধ্যে দিয়ে ক্যাথোড রশ্মি পাঠিয়ে তার চারিত্রিক গুণাবলী বিশ্লেষণ করেন।
গোল্ডস্টেইন করলেন ঠিক উল্টোটা।
তিনি সচ্ছিদ্র ক্যাথোডকেই পরীক্ষার জন্য বেছে নিলেন, তার ফলে ক্যাথোড রশ্মির প্রবাহের ঠিক উল্টো দিকে একটি অদৃশ্য প্রবাহ পেলেন তিনি। এই প্রবাহ ছিল অপেক্ষাকৃত কম গতিশীল কিন্তু ক্যাথোড রশ্মি অপেক্ষা বেশি ভরবেগ সম্পন্ন। এই রশ্মিকে তিনি ধনাত্মক আধানগ্রস্ত পেলেন এবং নাম দিলেন অ্যানোড রশ্মি।
কিন্তু এর উৎস্ সম্পর্কে কিছু বলতে পারলেন না।
রাদারফোর্ড যখন পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন, পরমাণুর কেন্দ্রকে তিনি এই আধানের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। তিনি এর নাম দিলেন প্রোটন। এই প্রোটনের সংখ্যার সাথে কোনো পরমাণুর দ্বারা বিচ্ছুরিত বর্ণালীর সম্পর্ক বর্তমান। এই বিশেষ সম্পর্কটি লক্ষ্য করলেন বিজ্ঞানী হেনরি মোজলে। তিনি পরমাণুর থেকে বিচ্ছুরিত X-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাথে পূর্ণ সংখ্যার সম্পর্ক খুঁজে পান।
এই পূর্ণ সংখ্যাগুলিকে তিনি বললেন পরমাণু ক্রমাঙ্ক বা Atomic Number। মজার কথা তিনি তার কাজটি সম্পূর্ণ করবার আগেই বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং সেখানেই প্রাণ হারান (ইনি-ই একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ)। পরবর্তীকালে দেখা যায় যে ওই পূর্ণ সংখ্যাটির সাথে পরমাণুতে অবস্থিত প্রোটন সংখ্যার মিল আছে; উভয়ের মান-ই সমান।
[আরো পড়ুন – পর্যায় সারণির ইতিহাস]
আধুনিক পর্যায় সারণি এই পরমাণু সংখ্যাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মোজলে-র আবিষ্কৃত পরমাণু ক্রমাঙ্ক দিয়ে পর্যায়বৃত্ততার সূত্রকে লিখলে পাওয়া যায়
“মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তার পারমাণবিক সংখ্যার অপেক্ষক। পারমাণবিক সংখ্যার উর্দ্ধক্রমে সাজালে মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।”
প্রত্যেকটি মৌলের সাথে তার পরমাণু ক্রমাঙ্ককে জুড়ে দেখা গেলো যে মেন্ডেলিফের ধারণার জয় হয়েছে। মেন্ডেলিফের পর্যায়সারণির বহু অসঙ্গতি পরমাণু ক্রমাঙ্কর ব্যবহারের ফলে দূরীভূত হয়েছে।
এগুলি ছিল –
- আইসোটোপগুলির এক ঘরে বসা যুক্তিযুক্ত, কারণ তাদের পরমাণু ক্রমাঙ্ক সমান, অর্থাৎ তারা একই মৌলের দুটি ভিন্ন পরমাণু।
- পারমাণবিক ভর বেশি হওয়া সত্ত্বেও K এর আগে Ar বা I এর আগে Te বসতে পারছে। কারণ Ar এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 18, K এর 19; Te -এর 52 এবং I এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 53।
- Na এর ঠিক উপরে Li বসা যুক্তিযুক্ত কারণ তাদের পরমাণু ক্রমাঙ্কর মধ্যে একদম 8 এর ফারাক, যদিও Li এর সাথে Mg-এর মিল বেশি।
- Ga ওর Ge আবিষ্কার হওয়ার পরে কেন তারা উক্ত Eka-Al বা Eka-Si এর স্থানে বসবে, তও পরমাণু ক্রমাঙ্ক ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।
আরো পরে কোয়ান্টাম নাম্বার আবিষ্কার হলে পর্যায় সারণি আধুনিক রূপ পায়। বর্তমানে আধুনিক পর্যায় সারণিতে সাতটি পর্যায় (সাতটি প্রাথমিক বা মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যাকে এবং মোট কক্ষপথের সংখ্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে), চারটি ব্লক (4টি গৌণ কোয়ান্টাম সংখ্যা বা কক্ষককে প্রতিনিধিত্ব করে) যাদের মধ্যে f-ব্লকটি মূল পর্যায় সারণির থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছে, এবং 18টি শ্রেণী বা গ্রূপ (ম্যাগনেটিক কোয়ান্টাম সংখ্যা অনুসারে s, p ও d ব্লকের মোট ইলেক্ট্রনের ধারণ ক্ষমতা 2+6+10=18) বর্তমান।
এই পর্যায় সারণি থেকে যে যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পর্যায়বৃত্ততার কথা জানা যায়:
ভৌত ধর্ম | রাসায়নিক ধর্ম |
পারমাণবিক আয়তন
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ঘনত্ব আয়নীভবন বিভব ইলেক্ট্রন আসক্তি তড়িৎ ঋণাত্মকতা গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক |
যোজ্যতা ও জারণ সংখ্যা
অক্সাইডের আম্লিক ও আয়নীয় ব্যাসার্ধ ক্ষারকীয় প্রকৃতি জারণ বিজারণ ক্ষমতা রাসায়নিক তীব্রতা ধাতব ও অধাতব ধর্ম
|
আরো পড়ো → রাসায়নিক বন্ধন
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_PSc-8.1C